বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে আইপিএল-ভক্তদের মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। চলমান আইপিএলের ১৮তম আসরের শেষ প্রান্তে এসে মোস্তাফিজকে দলে ভেড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালস। এতে করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে ক্রীড়াঙ্গন—সব জায়গায়ই উঠছে একটাই প্রশ্ন: শেষ মুহূর্তে চুক্তিবদ্ধ হলেও কি মোস্তাফিজ পুরো ৬ কোটি রুপি পারিশ্রমিক পাবেন?

চুক্তির অঙ্কটি নিঃসন্দেহে নজরকাড়া। তবে এই অঙ্কে থাকা ‘সম্পূর্ণ অর্থ’ পাওয়া নির্ভর করছে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও পরিস্থিতির ওপর, যা নির্ধারিত আছে আইপিএলের অফিসিয়াল নীতিমালায়।

আইপিএলের নিয়ম অনুসারে, যদি কোনো খেলোয়াড় মৌসুমের মাঝপথে ‘রিপ্লেসমেন্ট’ হিসেবে দলে যোগ দেন, তবে তার পারিশ্রমিক নির্ধারিত হয় ‘প্রো-রাটা’ ভিত্তিতে। অর্থাৎ পুরো মৌসুমের ম্যাচ সংখ্যা অনুপাতে মোট টাকার একটি অংশ তিনি পাবেন, শুধুমাত্র বাকি থাকা ম্যাচগুলোর জন্য। এখানে মাঠে নেমেছেন কি না, সেটি বিবেচ্য নয়—দলের সঙ্গে থাকলেই টাকা প্রাপ্য।

দিল্লি ক্যাপিটালস বর্তমানে খেলে ফেলেছে বেশিরভাগ ম্যাচ। তাদের হাতে এখন লিগ পর্বের মাত্র তিনটি ম্যাচ বাকি, প্লে-অফে উঠলে সেই সংখ্যা বাড়তে পারে। মোস্তাফিজ যদি শেষ তিন ম্যাচের সময়ই দলে যুক্ত হন, তবে ৬ কোটি রুপির চুক্তির মধ্যে তিনি কেবল ওই তিন ম্যাচের অনুপাতে অর্থ পাবেন। ধরুন পুরো মৌসুমে ১৪টি ম্যাচ থাকলে, তার অর্থ মোস্তাফিজ পাবেন ৩/১৪ অংশ। এছাড়া যদি তিনি কোনো ম্যাচে খেলেন, তাহলে আলাদাভাবে ম্যাচ ফিও যুক্ত হবে।

আইপিএলের ধারা ৬.৬ অনুযায়ী, কোনো রিপ্লেসমেন্ট খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিক মূল খেলোয়াড়ের চুক্তির চেয়ে বেশি হতে পারে না। এই নিয়মের আলোকে মোস্তাফিজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ কোটি রুপি, যেখানে তার বদলি খেলোয়াড় জ্যাক ফ্রেজার-ম্যাগার্ক ছিলেন ৯ কোটি রুপির চুক্তিতে।

এখানে আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ—মোস্তাফিজকে নেয়া হয়েছে একটি নির্দিষ্ট মৌসুমের জন্য। অর্থাৎ দিল্লি চাইলে পরের মৌসুমে তাকে ধরে রাখতে পারবে না। আগামী আইপিএলের নিলামে আবারও তাকে উঠতে হবে।

বিশেষ পরিস্থিতির কারণে চলতি আইপিএলে একাধিক বিদেশি খেলোয়াড় দেশ ছেড়ে গেছেন। ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনার জেরে আইপিএলের সূচিতে পরিবর্তন আনা হয় এবং অনেকে সুরক্ষার স্বার্থে আইপিএল থেকে সরে দাঁড়ান। এই অবস্থায় বিদেশি খেলোয়াড়দের বিকল্প খুঁজে নিতে দলগুলোকে বিশেষ ছাড় দিয়েছে আইপিএল কর্তৃপক্ষ।

মোস্তাফিজের এই চুক্তি তাই আংশিক সময়ের, আংশিক পারিশ্রমিকের। পুরো মৌসুমের জন্য নয়। ফলে যারা ভাবছেন মোস্তাফিজ হঠাৎ করে পুরো ৬ কোটি রুপি ঘরে তুলবেন, তাদের ধারণা কিছুটা সংশোধন করা প্রয়োজন।

তবে এই সুযোগ মোস্তাফিজের জন্য বড় একটি প্ল্যাটফর্ম। আইপিএলের শেষ ম্যাচগুলোতে যদি নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে আগামী মৌসুমে মূল নিলামে বড় অঙ্কের প্রস্তাব পেতে পারেন, এমনকি একটি স্থায়ী জায়গাও করে নিতে পারেন কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিতে।

শেষ পর্যন্ত মোস্তাফিজ কতটা পারিশ্রমিক পাবেন, সেটি সময়ই বলবে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, আইপিএলের নীতিমালা অনুযায়ী, তিনি পুরো ৬ কোটি রুপি পাচ্ছেন না—পাচ্ছেন কেবল অংশ অনুযায়ী টাকা। তবু আইপিএলে এই সময়ের সুযোগটিই হতে পারে তার ক্যারিয়ারের জন্য নতুন এক সম্ভাবনার দরজা।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *